ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) -
বিজ্ঞান -
বিজ্ঞান অনুশীলন বই |
| NCTB BOOK
সেশন শুরুর আগে...
এই শিখন অভিজ্ঞতায় যেহেতু তোমাদের নিজেদের বাসার রান্নাঘরটাই ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখতে হবে, প্রথম সেশন শুরুর আগেই কিছু প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ সেরে নিলে কেমন হয়? সেজন্য বাসায় তোমাদের কিছু কাজ করতে হবে। প্রথমেই তোমাদের বাসায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় এমন সব পাত্র, হাঁড়িপাতিল, চামচ ইত্যাদির ছবিসহ একটি তালিকা করে ফেলো ছক-১ এ।
এই উপকরণগুলোর মধ্যে কোনটা কিসের তৈরি তা কি তোমরা জানো? না জেনে থাকলে বাসায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে জেনে নিতে পারো। একই সঙ্গে এসব তৈজসপত্রের আকার-আকৃতিসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও একটু ভালোভাবে লক্ষ করো।
দেখো তো, কোনগুলোকে আলোতে রাখলে চকচক করে? আবার কোনগুলোকে অন্য কিছু দিয়ে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে? আবার কোনগুলো হাত থেকে পড়ে গেলে ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে? এসব তথ্য নিয়ে ছক-১ এর সবগুলো উপকরণের বৈশিষ্ট্যগুলো ছক-২ এ লিপিবন্ধ করো।
ছক-১
ছক-২
তৈজসপত্রের নাম
কী দিয়ে তৈরি?
কী দিয়ে তৈরী
আঘাত করলে ঝনঝন করে?
পড়ে গেলে ফেটে বা ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে?
একইভাবে ভেবে দেখো তো তোমাদের বাসাবাড়িতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সংযোগ তারগুলোতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য কেমন? সেগুলো কী চকচক করে?
তোমার পর্যবেক্ষণ গুছিয়ে লিখে এই শিখন অভিজ্ঞতার প্রথম সেশনে অংশ নাও।
প্রথম সেশন
তোমার মতো তোমার বন্ধুরাও তাদের নিজ নিজ বাসার রান্নাঘরের তৈজসপত্র সম্পর্কে তথ্য নিয়ে এসেছে। এই সেশনের শুরুতেই বন্ধুদের সঙ্গে বসে তোমাদের নিজেদের বাসার রান্নাঘর পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া তথ্য শেয়ার করো। দেখে নাও অন্যদের বাসায় রান্নার কাজে কী ধরনের তৈজসপত্র ব্যবহার করা হয়
সবার পাওয়া তথ্য দেখে বুঝতেই পারছ, কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি জিনিস পড়ে গেলে ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে; যেমন- মাটি বা কাচের তৈরি থালাবাসন আবার কিছু জিনিস হাত থেকে পড়ে গেলে সহজে ভাঙে না বরং বেঁকে যায়, ঝনঝন শব্দ হয়; যেমন- তামা, স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি পাতিল।
এবার একটা ছোট্ট পরীক্ষা করা যাক চলো।
উপরের ছক দেখে কী মনে হচ্ছে? তামা ও কাপড় কোনটার তাপ পরিবাহিতা কেমন? তোমার উত্তর নিচে লিখে রাখো।
এই পর্যায়ে তোমরা বন্ধুরা মিলে তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের পদার্থের বৈশিষ্ট্য এবং এর বাহ্যিক প্রভাব' অধ্যায় থেকে পদার্থের কিছু বৈশিষ্ট্য, যেমন- 'ঘনত্ব', 'দ্রাব্যতা', 'দৃঢ়তা ও নমনীয়তা", "তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা', 'চুম্বকত্ব', এবং 'বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে পদার্থ শনাক্তকরণ' অংশগুলো পড়ে নাও।
এবার একটু ভেবে দেখো তো ঢাকনা অথবা চামচের হাতল হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। কেন? যদি প্লাস্টিকের হাতল না থাকে তাহলে কাপড় পেঁচিয়ে নেওয়া হয় কেন? কেনই বা গ্যাসের চুলার বার্নারটি লোহার বা পিতলের হয় কিন্তু সুইচটি প্লাস্টিকের হয়? ভেবে নিচে তোমার মতামত লেখো।
আগের সেশনে তো পরীক্ষা করে দেখলে যেসব পদার্থের তাপ পরিবাহিতা একরকম নয়। তোমরা তো রান্নাঘরে আরও অনেক উপকরণে তৈরি পদার্থ খুঁজে পেয়েছ। তাপ পরিবাহিতার ভিত্তিতে সেগুলোকে আলাদা করা যায় কি? বিভিন্ন পদার্থের তাপ পরিবাহিতা পর্যবেক্ষণের জন্য আরেকটা পরীক্ষা করে দেখতে পারো।
প্রয়োজনীয় সামগ্রীঃ
মোটামুটি একই আকারের একটি কাঠের চামচ, একটি প্লাস্টিকের চামচ, একটি স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের চামচ, তিনটি এক টাকার কয়েন, পানি গরম করার জন্য একটি পাত্র, এক গ্লাস পানি, তাপ দেওয়ার জন্য মোমবাতি বা অন্যকিছু, মোম, দিয়াশলাই এবং সময় মাপার জন্য যেকোনো একটি ঘড়ি।
যা করতে হবে:
সামান্য ভাপ দিয়ে মোম নরম করো। সবগুলো চামচের হাতলে সামান্য পরিমাণে নরম মোম লাগাও।এখন কয়েনগুলো চামচের ওপর মোমের গায়ে এমনভাবে চাপ দিয়ে বসাও যাতে কয়েনগুলো মোমের গায়ে লেগে থাকে। এবার চামচগুলো এমনভাবে পাত্রে ডুবাও যেন কয়েনগুলো পাত্রের ওপরের অংশের বাইরে থাকে। তারপর মোমবাতি বা অন্য কিছু দিয়ে পাত্রটিতে তাপ দিতে থাকো।
চামচের সঙ্গে আটকে থাকা কয়েনগুলোর অবস্থা এবার পর্যবেক্ষণ করো। কয়েনগুলো কি আলাদা হয়ে গেছে? যদি তাই হয় তবে কোনটি প্রথমে আলাদা হয়েছে? আলাদা হতে কত সময় নিয়েছে? অন্যগুলো আলাদা হতে কত বেশি সময় নিয়েছে? তথ্যগুলো নিচের ছকে লিখে রাখো।
চামচ
কোনটি প্রথমে আলাদা হয়েছে।
আলাদা হতে কত সময় নিয়েছে?
কাঠের চামচ
প্লাস্টিকের চামচ
ধাতব চামচ
ভেবে দেখেছ, কেন ধাতব চামচ থেকে কয়েনটি আগে আলাদা হয়ে গেল? তিন ধরনের পদার্থের মধ্যে কোনটার তাপ পরিবাহিতা বেশি?
অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের এই পরীক্ষণের অংশটি ভালো করে পড়ে তার উত্তর খুঁজে নাও।
বাড়ির কাজ
ভেবে দেখো তো- চায়ের কাপ কেন সাধারণত ধাতব না হয়ে কাচ বা সিরামিকের হয়, আবার অন্যদিকে রান্নার হাঁড়ি প্লাস্টিকের না হয়ে ধাতব কেন হয়?
এবার আমরা তড়িৎ-তাণ্ডব ঘটিয়ে ফেলব। পরীক্ষাটি খুব সহজ আর এটি করতে খুব বেশি কিছু লাগেও না!
প্রয়োজনীয় সামগ্রী:
একটি ব্যাটারি, কিছু তামার তার এবং একটি ডায়োড (তুমি ইচ্ছা করলে ডায়োডের বদলে একটি টর্চ লাইটের বাল্বও ব্যবহার করতে পার, কিন্তু আজকাল নানা রংয়ের ডায়োড খুবই সহজে অল্পমূল্যে পাওয়া যায়), সঙ্গে আরো লাগতে পারে কাঠের টুকরা, প্লাস্টিক, রাবার ও কাগজ। ব্যস, এই কয়েকটা উপকরণ দিয়েই মজার পরীক্ষাটি করে ফেলতে পারবে।
যা করতে হবে:
উপরের চিত্রে দেখানো ব্যাটারির এক প্রান্তে তার লাগিয়ে সেটি বারে লাগাও। আরেক টুকরা তার নিয়ে ব্যাটারির আরেকপ্রান্ত থেকে ঘুরিয়ে এনে রাষ্ট্রের বারের অপর প্রান্তে লাগাও। দেখো তো বাল্বটি জ্বলে কিনা?
এরপর সংযোগ খুলে দিয়ে তার ও বালের মাঝখানে এক এক করে প্লাস্টিক, রাবার, জনা, সুতা, পেরেক, কাগজ, কয়লা ইত্যাদি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করো এভাবে সংযোগ দিলে বাল্বটি জ্বলে কিনা।
পর্যবেক্ষণ শেষে নিচের ছকটা পূরণ করো।
নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছ, তামা, গুনা, পেরেকের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে বলে বাল্বটি জ্বলেছে। অন্যগুলোর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ যেতে পারেনি বলে বাল্বটি জ্বলেনি। তাহলে নিশ্চয়ই এটাও বলতে পারবে, কেন বৈদ্যুতিক তার বা যন্ত্রাংশে তামার তারের ওপর প্লাস্টিক বা রাবারের আস্তরণ দেওয়া থাকে। ঝটপট নিচে লিখে ফেলো।
ধাতু ও অধাতুসমূহের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য তোমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছ। এখন তোমরা এগুলোকে আলাদাও করতে পারো। কিন্তু ধাতু ও অধাতুকে বল প্রয়োগ করলে এদের কী কোনো পরিবর্তন। হয় কী? চলো আরেকটা পরীক্ষণ করে দেখা যাক।
প্রয়োজনীয় সামগ্রী:
এই পরীক্ষা করতে লাগবে একটা অ্যালুমিনিয়ামের প্লেট ও এক টুকরা কয়লা। নিজেদের বাসা থেকেই এগুলো নিয়ে আসতে পারো। বাবা মায়ের কাছ থেকে চেয়ে আনতে হলে পুরোনো, ব্যবহার হয় না এমন প্লেট আনলে ভালো। কেন? তা একটু পরেই দেখবে!
যা করতে হাবে:
এবার এগুলো মেঝেতে রেখে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করো। দেখো তো কোনো পরিবর্তন হয়। কিনা তা নিচের ছকে লেখ।
উপকরণ
ঝনঝন করে?
ভেঙ্গে টুকরো হয়ে যায়?
সহজে ভাঙ্গে না নাকি ভঙ্গুর?
অ্যালুমিনিয়ামের প্লেট
কয়লার টুকরা
আর কি কোনোভাবে ধাতু-অধাতুর আকার পরিবর্তন করা যেতে পারে বলে মনে হয়?
(এখন বুঝতে পারছ পুরনো প্লেট আনার কথা কেন বলা হয়েছিল? নতুন প্লেট হাতুড়িপেটা করে। বাঁকাভ্যাড়া করে বাসায় নিয়ে গেলে কী এক বিপদ হতো বলো তো?!)
বাড়ির কাজ
একটা পেরেক ৭ দিন পানিপূর্ণ বিকারে রেখে দিয়ে দেখো তো কি হয়। ৭ দিন পর পেরেকটি পর্যবেক্ষণ করার পর নিচের হুকে ছবি আঁকো ও পেরেকের কী পরিবর্তন হয়েছে তা লিখে রেখো।
তাপ দিলে যে কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় আর তরল পদার্থ বায়বীয় পদার্থে পরিণত হয় সে তো তোমরা ইতোমধ্যেই জানো। কিন্তু সকল কঠিন পদার্থ কি একই তাপমাত্রায় গলতে শুরু করে? আবার সকল তরল কি একই তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় চলে যায়? চলো একটা পরীক্ষা করে দেখা যাক-
প্রয়োজনীয় সামগ্রী:
টেস্টটিউব, কিছু ছোট ছোট মোমের টুকরা, বিকার বা পানি গরম করার জন্য কোন পাত্র, পানি, মোমবাতি বা স্পিরিট ল্যাম্প, থার্মোমিটার, ভারজালি বা উঁচু স্ট্যান্ড ইত্যাদি।
যা করতে হবে:
টেস্টটিউবে কিছু ছোট ছোট মোমের টুকরা নাও। বিকারটিতে পানি নিয়ে স্পিরিট ল্যাম্পের ওপর রাখো।
চিত্রের মতো করে স্ট্যান্ডের সঙ্গে আটকিয়ে টেস্টটিউব থার্মোমিটার বিকারের পানিতে ডুবাও যাতে এগুলোর কোনোটাই বিকারের তলা স্পর্শ বা গায়ে না লাগে।
স্পিরিট ল্যাম্পের সাহায্যে বিকারের তলায় তাপ দিতে থাকো।
থার্মোমিটারেরও টেস্টিউবে রাখা মোমের দিকে খেয়াল করো। থার্মোমিটারে কি তাপমাত্রা বাড়ছে? মোমের অবস্থার কি কোনো পরিবর্তন ঘটছে?
মোম গলা শুরু হলে থার্মোমিটারে তাপমাত্রার পাঠ নাও । এই পাঠ হলো মোমের গলনাঙ্ক
এবার পানির দিকে খেয়াল রাখো। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে একপর্যায়ে পানি ফুটতে শুরু করবে।
থার্মোমিটারে তাপমাত্রা যখন ৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তখন সতর্কভাবে বিকারের পানি ও থার্মোমিটারের দিকে খেয়াল করো।
পানি যে তাপমাত্রায় ফুটতে শুরু করবে: থার্মোমিটারে সেই তাপমাত্রা দেখে পাঠ নাও। এই পাঠ হলো পানির স্ফুটনাঙ্ক ।
এবার টেস্ট টিউবের নিচ থেকে পানির বিকার, তারজালি এবং ল্যাম্প সরিয়ে নাও।
লক্ষ করো কোন তাপমাত্রায় মোম জমাট বাঁধতে শুরু করেছে, যে তাপমাত্রায় মোম জমতে শুরু করবে সেটা হচ্ছে মোমের হিমাঙ্ক।
যে ভাপমাত্রায় মোম গলেছে (গলনাক্ষ )
যে তাপমাত্রায় পানি ফুটেছে (স্ফুটনাঙ্ক)
জমেছে (হিমাচ্চ)
ফিরে দেখা
একটু ভেবে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখো-
আমরা রান্নার কাজে এমন কোনো পাত্র যদি ব্যবহার করতাম যার গলনাঙ্ক কম তাহলে রান্না করা। সম্ভব হতো কী না? ভেবে দেখো তো, ধাতব পাত্রে রান্না করা সুবিধাজনক কেনা।